মন্ত্র প্রসঙ্গে কিছু জরুরি কথাঃ
মন্ত্র সাধনার আরো কয়েকটি জরুরী কথা জেনে নেওয়া খুব দরকার। যে কোন মন্ত্র বা মন্ত্র সাধনার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার। তবেই একজন ভক্ত বা সাধক তার সাফল্যের ব্যাপারে নিশ্চত হতে পারবেন।
একঃ
যেখানে যে রঙের ফুল, সাধকের পরিধেয় কাপড়, আসন ইত্যাদির ব্যাপারে বিশেষ ভাবে বলা আছে বা নির্দেশ দেওয়া আছে সে ব্যাপারে পরিপূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। কোনও কারণে যদি কথিত আসন পাওয়া না যায় তাহলে কুশের আসন ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি কথিত মালা না পাওয়া যায় তাহলে রুদ্রাক্ষের মালা দিয়ে সাধনা করা যেতে পারে। এ ধরনের আসন ও মালা প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায় এবং দামও খুব বেশি নয়, সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই।
দুইঃ
যেখানে বা যে ঘরে সাধনার উদ্দেশ্য ব্যবস্থাদি করা হয়েছে সেখানে যে ধরনের আসন, (তা কম্বল,কুশ বা ব্যাঘ্র চর্মের হতে পারে) ব্যবহার করা হয়েছে। সাধনার কাজ শেষ বা হওয়া পর্যন্ত তার দিক, আসন, মালা, প্রদীপ, সাধনার পদ্ধতি ও সংখ্যা (মালা জপ করার সংখ্যা) ইত্যাদিতে কোনও পরিবর্তন করা চলবেনা। প্রথম দিন যত বার, মালা জপ করা হয়েছে (১০৮ দানায় ১ বার) বা মন্ত্র জপ করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত ততবারই মন্ত্র জপ বা মালা জপের হার একই রাখতে হবে। তার চেয়ে কম বা বেশি করলে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবধান বা বিলম্ব হতে পারে।
তিনঃ
সাধনা মন্ত্রেরই হোক বা যন্ত্রের হোক, তা করতে হবে শ্রদ্ধার সঙ্গে।
চারঃ
এটা মাথায় রাখা দরকার যে মন্ত্র যদি গুরুর মুখ থেকে গ্রহণ বা শ্রবণ করা যায় তাহলে মন্ত্র তুলনামূলক ভাবে শীঘ্র ফল প্রদান করে। কথাতেই আছে, ফল পেতে চাও গুরু ধর। পরে আলোচনার সময়ে যথার্থ গুরুর পরামর্শ দেওয়া হবে। এতে সাধকের গুরু নির্বাচনে সুবিধা হবে।
পাঁচঃ
যদি সম্ভব হয় তাহলে সামনে গুরুর একটা ছবি রেখে সাধনা করবেন। গুরু যদি না থাকে তাহলে নিজেকে গুরু মনে করে নিজের একটা ফটো রেখে অথবা শিবকে গুরু মনে করে সামনে মহাদেবের একটা ছবি রেখে তাকে গুরু জ্ঞান করে সাধনা করবেন।
ছয়ঃ
মন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিনই প্রদীপ ও ধূপ ধুনো দিতে ভুলোবেন না।
সাতঃ
সাধনাকালে কপালে তিলক কাটতে ভুলবেন না। এ সময়ে তিলক লাগানো জরুরী। মনে করবেন, কপালের তিলক আপনার সাধনার ক্ষেত্রে ট্রেড মার্ক বা লাইসেন্সের মতো কাজ করে।
আটঃ
সাধনাদির ক্ষেত্রে একটা কথা প্রচলিত আছে যে এ জন্য খুব শান্ত-নির্জন জায়গাই চাই বা সাধনার জন্য নির্জন অরণ্যে বা পাহাড়ে যাওয়া দরকার। বস্ত্তুতঃ তা কিন্তু ঠিক নয়, সাধনা নিজের বাড়িতে ও সম্ভব। খোলা, হাওয়া বাতাসযুক্ত ঘর, (বাচ্চাদের হৈ চৈ থেকে দূরে) সাধনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
নয়ঃ
সাধনার সময় কথিত দেব দেবী বা ইষ্ট দেবতার ছবি বা মূর্তি রাখলে সাধনার সুবিধা হয়। তবে সবার আগে, আগেই বলেছি সম্ভব হলে গুরুর ছবি রেখে সাধনা করাই উচিত।
দশঃ
আমরা সবাই জানি মন্ত্রের জপ সংখ্যা এত বেশি যে আজকালকার ব্যস্ততার জীবনে এত বার জপ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে কম করা যাবে না বা কম করলে কাজ হবে না। শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে যদি এগারোবার, একুশবার, একত্রিশবার, একচল্লিশবার বা একান্নবার জপ করলেও সাফল্য পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে শ্রদ্ধা ভক্তির সঙ্গে অবশ্যই দরকার শান্ত-নিরিবিলি ঘর বা জায়গা এবং মানসিক একাগ্রতা।
এগারোঃ
সাধনার কাজটা শুভ দিন দেখে শুরু করলে ভাল হয়। শুরু করার সময় শুভ নক্ষত্র, শুভ দিন, শুভ তিথি বা গ্রহন অথবা নবরাত্রির দিন বেছে নিলে ভাল হয়।
বারোঃ
মনে রাখবেন প্রতিবার মন্ত্র জপ করার পর সাধ্যমতো ভোগ প্রসাদ দেবেন এবং ঐ একই মন্ত্রে এগারোবার আহুতি দিয়ে খুব সংক্ষেপে প্রতিদিন যজ্ঞ করবেন।
তেরোঃ
সাধনার সময় শরীর, মন, পোশাক ইত্যাদির শুদ্ধতার দিকে অতি অবশ্যই নজর দেবেন।