তাবীজ লেখার কয়েকটি পালনীয় বিষয়ঃ
তাবীজ লেখকদের এবং তাবীজ ব্যবহারকারীদের কতগুলি বিষয়ের প্রতি তাবীজ লক্ষ্য রাখা দরকার। তাবীজ লেখার পদ্ধতি এবং নিয়মাবলী ছাড়া তাবীজ লিখলে সে তাবীজে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। এর জন্য দিন, মাস, সময়, চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদির গতিবিধির প্রতিটি নিয়ম পালন করে তাবীজ লিখতে এবং ব্যবহার করতে হয়। তাবীজ লেখক ও ব্যবহারকারীদের নিম্নের নিয়মাবলীর প্রতি সর্তকদৃষ্টি রাখা অবশ্য কর্তব্য।
নিম্নে তাবীজ লেখার দশটি নিয়ম দেয়া হলঃ
তাবীজ লেখা এবং ব্যবহার করার দশটি নিয়ম অব্শ্যই পালনীয়। অন্যথায় তার দ্বারা ফল পাওয়া সুদূর প্রসারি।
১) তাবীজ লেখা ও ব্যবহার করার সময় ওয়ূ-গোসল করে পাক-পবিত্র হয়ে নিতে হবে।
২) তাবীজ লেখার স্থান পবিত্র হওয়া দরকার, এ জন্য জায়নামাযের উপর বসে তাবীজ লেখা উত্তম।
৩) বিভিন্ন সুগন্ধি বস্তু, যেমন-অতর, লোবান বা আগর বাতি জ্বালানে তথা তাবীজ লেখার সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।
৪) তাবীজের নির্ভেজাল কপি, এবং ওস্তাদের নিকট হতে তাবীজ লেখার জন্য অনুমতি নিতে হবে।
৫) সাধারণতঃ লোকের উপস্থিতিতে তাবীজ না লেখা ভাল, তাবীজ লেখার জন্য লোক শূন্য ঘরের দরকার যেখানে একা একা বসে তাবীজ লেখা যায়।
৬) অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন রাখা, লেখক যে জন্য তাবীজ লিখতেছেন, সে বিষয়ের জন্য তাবীজটির অমোঘ উপকারিতা সম্পর্কে তার পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে।
৭) শারীরিক অপবিত্রতা কিম্বা পোষাক পরিচ্ছদে অপবিত্রতা তা হতে সম্পূর্ন পবিত্র হয়ে তাবীজ লিখতে হবে।
৮) নিয়ত ছহীহ রাখতে হবে, তাবীজ লেখার সময় কি উদ্দেশ্যে তাবীজ লিখতেছেন তা মনে রাখতে হবে।
৯) তাবীজ লেখকের সত্যবাদি হতে হবে, মিথ্যাবাদীর লেখা তাবীজে কোন উপকার হবে না।
১০) তাবীজের ফল ভাল হবে কি মন্দ হবে, সময় ও দিন সম্পর্কে লেখকের জ্ঞান থাকতে হবে।
তাবীজের বিষয় ও লেখার ধরন-
বিভিন্ন রোগের বা সমস্যার জন্য বিভিন্ন ধরনের তাবীজ প্রচলিত আছে। তাবীজ লেখার সময় লেখার ধরন ও স্থানের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। এসব বিষয়ের প্রতি নজর রেখে লেখকবৃন্দ তাবীজ লিখলে সুফল অবশ্যই পাওয়া যাবে। নিম্নে এসব বিষয়ে মোটা মুটি ধারণা দেয় হল।
মহব্বত সম্পর্কীয় তাবীজঃ
এ তাবীজ লেখার সময় লেখক লেখক অযু করে পাক-পবিত্র এয় কাগজ-কলম নিবে। ডান হাতে কলম নিয়ে প্রতি চন্দ্র মাসের প্রথম রবিবার সূর্যোদয়ের সময় লিখতে হবে। আর সোমবার লিখলে দিনের শেষ ভাগে যোহর এবং আছর নামাযের মধ্যবর্তী সময় লিখতে হবে। শুক্রবার লিখলে সূর্য উপরে উঠলে অর্থাৎ সকাল আট বা নয় ঘটিকার সময় লিখবে। মহব্বত বা ভালবাসার তাবীজ লেখার সময় এ সব নিয়ম পালন করলে সত্বর ফল পাওয়া যাবে। অন্যায় ও ধোকা দেয়ার জন্য অর্থাৎ শরীয়ত বিরোধী কোন কাজের জন্য এ তাবীজ লিখে অপাত্রে ব্যবহার করার চেষ্টা করলে তাবীজে কোন উপকারতো হবেই না উপরন্ত দুনিয়ায় বিভিন্ন বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরকালে কঠিন আযাবে পড়বে।
শত্রুতা সৃষ্টির তাবীজঃ
শরীয়ত বিরোধী না হলে শত্রুতা সৃষ্টি করার তাবীজ বাম হাত দ্বারা লিখলে উত্তম ফল পাওয়া যায়। এ তাবীজ চন্দ্র মাসের শেষ শনিবারে দিরে প্রথম ভাগে এবং মঙ্গলবার দিনের শেষ ভাগে লিখলে যথাযথ ফল পাওয়া যাবে।
স্বপ্নে বন্দি করার তাবীজঃ
কাউকে স্বপ্নে বন্দি করতে হলে কল্পনার রাজ্যে আমলকারীকে বিচরন করতে হবে। অর্থাৎ এমন আমল করতে হবে যাতে উদ্দেশ্য ও অভীষ্ট ব্যক্তির অন্তরে ও কল্পনার রাজ্যে আমলকারীর ধ্যান ধারণা সদা জাগ্রত ধাকে। এ তাবীজ এক দিক দিয়ে যেমন দোষণীয়, তেমনি অপর দিক দিয়ে অতি উত্তমও। অভিষ্ট ব্যক্তি যদি আমলকারীর যথাযত ব্যক্তি হয়ে থাকে, যেমন-ওস্তাদ, পীর এবং মুরব্বী বা এ ধরনের লোক অথবা কোন সুন্দরী যুবতী মেয়ে যাকে শুধু মাত্র বিবাহ করে বৈধ ভাবে ঘরসংসার করার উদ্দেশ্যে তার মনে স্থান করে নেয়ার আমল করা, এই ধরণের প্রচেষ্টা বা আমল দোষণীয় নয়। তবে অভিষ্ট ব্যক্তির দ্বারা কার্য সিদ্ধি বা অসৎ কোন কিছু বাসনার উদ্দেশ্যে যদি তার মন ভুলানোর আমল করা হয়। তবে তা নিতান্ত জঘন্য এবং দোষণীয় ও শক্ত গুনাহ।
এ তাবীজ লেখার জন্য মিষ্টি ফলের রস, যেমন-আনার বা আঙ্গুরের রস অথবা এ জাতীয় ফল গাছের পাতার রস দ্বারা লেখা উত্তম। এসব ফলের ব্যবস্থা না করতে পারলে মেশক জাফরান কালি দ্বারা লিখলেও তাড়াতাড়ি সুফল পাওয়া যাবে। এ তাবীজ লেখার সময় শ্বাস অর্ধরুদ্ধ করে লিখতে হবে, যেন এক নাক দিয়ে সামান্য শ্বাস বের হয় এবং গোলমরিচ বা এ জাতীয় ঝাল কোন জিনিস মুখে রেখে তাবীজ লিখবে। এত তাবীজে আশাতীত ফল লাভ হবে। আর নিম্নে দোয়াটি তাবীজ লেখার শুরুতে লিখেবে।
দোয়াটি এইঃ
উচ্চারণঃ কাতাবতু হাযাত্তা’ উক্বাদাতান নাওমি ওয়া লিসানাহ্ ওয়া আরা কুনতুম ফুলানিববি ফুলানি বিহুববিহী ওয়া লা উয়ানফাউ আবাদা।
“ফলান বি ফলান”- এর স্থানে অভিষ্ট ব্যক্তি এবং তার পিতার নাম লিখতে হবে। এ উদ্দেশ্যে অত্র তাবীজটি কয়েকবার পরিক্ষা করে দেখা হয়েছে। এ ধরনের নিয়মে তাবীজ লিখতে পারলে অবশ্যই ফল পাওয়া যাবে।
জবান বন্দির তাবীজঃ জবান বন্দির অর্থ হল কারও গুণগ্রাহী হওয়ার জন্য তাবীজের আমল অর্থাৎ আমলকারির পক্ষপাত ছাড়া বিরুদ্ধাচরন না করার জন্য তার মুখের বুলিকে স্তব্ধ করে দেওয়া। অভিষ্ট ব্যক্তি সর্বদা তার মুখে ও কাজে আমলকারীর পক্ষপাতিত্ব করা। রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এ ধরণের আমর অত্যন্ত উপযোগী অন্যায়ভাবে এ ধরনের আমল করা শরিয়াত বিরোধী। সমালোচনার দ্বারাই নিজে সংশোধন হতে পারে এবং অন্যকে সংশোধনের কোন সন্দেহ নেই।